কত বছর গ্যাপ দিয়ে অনার্স করা যাবে: HSC পাশের পর পড়াশোনায় গ্যাপ? জানুন কত বছর গ্যাপ দিয়ে পাবলিক, প্রাইভেট ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স ভর্তি হতে পারবেন এবং আপনার করণীয় কী।
কত বছর গ্যাপ দিয়ে অনার্স করা যাবে?
Study Gap for Honors Admission: উচ্চ মাধ্যমিকের পর একটি স্টাডি গ্যাপ আপনার শিক্ষাজীবনের শেষ নয়, বরং একটি নতুন সম্ভাবনার শুরু হতে পারে। বাংলাদেশে প্রতি বছর হাজারো শিক্ষার্থী ব্যক্তিগত, পারিবারিক বা অন্য কোনো কারণে পড়াশোনায় বিরতি নেন এবং তাদের মনে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন থাকে – ‘কত বছর গ্যাপ দিয়ে আমি আবার অনার্সে ভর্তি হতে পারবো?’ এই আর্টিকেলে আমরা পাবলিক, প্রাইভেট ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ নিয়মকানুনগুলো বিস্তারিত আলোচনা করব এবং আপনার সব প্রশ্নের সহজ সমাধান দেব। “কত বছর গ্যাপ দিয়ে অনার্স করা যাবে” – এই প্রশ্নটি এবং “অনার্স ভর্তির বয়সসীমা” নিয়ে আপনার সকল দ্বিধা দূর করাই আমাদের লক্ষ্য। চলুন, আপনার ভর্তি যাত্রার একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করা যাক।
স্টাডি গ্যাপ কেন হয় এবং এটি কি আপনার দুর্বলতা?
Why Study Gaps Happen: পড়াশোনায় বিরতি বা স্টাডি গ্যাপ হওয়া খুবই সাধারণ একটি বিষয়। এটি কোনোভাবেই একজন শিক্ষার্থীর অযোগ্যতা প্রমাণ করে না। বরং এর পেছনে নানা বাস্তবসম্মত কারণ থাকতে পারে।
- ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি: অনেকেই পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে সেরা বিষয়ে ভর্তির জন্য দ্বিতীয়বার (Second Time) ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে এক বছর বিরতি দেন।
- পারিবারিক সমস্যা: পরিবারের কোনো সদস্যের অসুস্থতা বা অন্য কোনো জরুরি কারণে অনেককে সাময়িকভাবে পড়াশোনা থামাতে হয়।
- আর্থিক সংকট: আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীকে পড়াশোনার খরচ জোগাতে কিছু সময় কাজ করতে হয়।
- ভুল বিষয় নির্বাচন: পছন্দের বিষয় বা বিশ্ববিদ্যালয় না পাওয়ায় এক বছর অপেক্ষা করে আবার চেষ্টা করার সিদ্ধান্ত নেন অনেকে।
মনে রাখবেন, স্টাডি গ্যাপ আপনার দুর্বলতা নয়। এই সময়টাকে আপনি কীভাবে কাজে লাগিয়েছেন, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। এটিকে আপনার জীবনের একটি অভিজ্ঞতা হিসেবে দেখুন যা আপনাকে আরও পরিণত করেছে।
অনার্স ভর্তির সাধারণ নিয়মাবলী
General Admission Rules: বাংলাদেশে অনার্সে ভর্তির ক্ষেত্রে মূলত আপনার SSC এবং HSC পরীক্ষার পাশের সাল গণনা করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে দেয় যে, কোন কোন সালের পরীক্ষার্থীরা আবেদন করার যোগ্য।
- পাশের সাল গণনা: যদি কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৯ সালের SSC এবং ২০২১ ও ২০২২ সালের HSC উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের আবেদনের সুযোগ দেয়, তার মানে হলো যাদের কোনো স্টাডি গ্যাপ নেই (২০২২) এবং যাদের এক বছরের গ্যাপ আছে (২০২১), তারা আবেদন করতে পারবেন।
- পাবলিক বনাম প্রাইভেট: পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির নিয়ম বেশ কঠোর এবং আসন সংখ্যা সীমিত হওয়ায় প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। অন্যদিকে, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন এবং পরিস্থিতি বিবেচনা করে অনেক বেশি নমনীয় নীতি অনুসরণ করে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির নিয়ম
Public University Admission Rules: পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিটি শিক্ষার্থীর স্বপ্ন। তবে এখানে স্টাডি গ্যাপের নিয়ম বেশ কঠিন। বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ই সদ্য পাশ করা শিক্ষার্থীদের প্রাধান্য দেয়।
সেকেন্ড টাইম ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ
Second Time Admission Opportunity: “সেকেন্ড টাইমার” শব্দটি তাদের জন্য, যারা HSC পাশের পরের বছর আবার ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন (অর্থাৎ ১ বছরের গ্যাপ)। তবে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সুযোগ থাকে না।
- যেখানে সেকেন্ড টাইমের সুযোগ নেই: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), এবং বেশ কিছু বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণত সেকেন্ড টাইমের সুযোগ দেয় না। অর্থাৎ, আপনাকে HSC পাশের বছরেই ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে।
- যেখানে সেকেন্ড টাইমের সুযোগ আছে: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং জিএসটি (GST – General, Science and Technology) গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাধারণত সেকেন্ড টাইমের সুযোগ দেওয়া হয়।

প্রধান কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাডি গ্যাপের সাধারণ নিয়ম
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনার্স ভর্তির নিয়ম
National University Admission Rules: যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পান না বা যাদের স্টাডি গ্যাপ তুলনামূলকভাবে বেশি, তাদের জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় একটি চমৎকার বিকল্প। এখানকার নিয়ম অনেক শিথিল।
- স্টাডি গ্যাপ নীতিমালা: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণত HSC পাশের পর ২-৩ বছর পর্যন্ত গ্যাপ থাকা শিক্ষার্থীদেরও আবেদন করার সুযোগ দেয়। এটি প্রতি বছরের ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে নির্দিষ্ট করে দেওয়া থাকে।
- আবেদনের যোগ্যতা: ভর্তির ফলাফল মূলত SSC ও HSC পরীক্ষার GPA-এর উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়। তাই ভালো GPA থাকলে এখানে ভর্তি হওয়া তুলনামূলকভাবে সহজ।
Study Gap নিয়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি
Private University Opportunities: স্টাডি গ্যাপ থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ। তারা শুধু আপনার সার্টিফিকেট নয়, আপনার মেধা এবং আগ্রহকেও মূল্যায়ন করে।
- নমনীয় নীতিমালা: বেশিরভাগ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ৪-৫ বছর বা ক্ষেত্রবিশেষে তার চেয়েও বেশি স্টাডি গ্যাপ গ্রহণ করে।
- সরাসরি যোগাযোগ: আপনার গ্যাপ যদি একটু বেশি হয়, হতাশ না হয়ে সরাসরি পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাডমিশন অফিসে যোগাযোগ করুন। তারা আপনাকে সঠিক পথ দেখাতে পারবে।
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
Pro-Tip: “আপনার যদি ২ বছরের বেশি গ্যাপ থাকে, তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আশা ছেড়ে না দিয়ে যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে সেকেন্ড টাইমের সুযোগ আছে সেগুলোতে মনোযোগ দিন। একই সাথে সেরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি তালিকা তৈরি করে তাদের ভর্তি অফিসে সরাসরি কথা বলুন। আপনার গ্যাপের সময় কোনো কোর্স বা কাজ করে থাকলে তা ভাইভাতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”
বিষয়ভিত্তিক কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও তাদের গ্যাপ পলিসি



