চ্যাটজিপিটি দিয়ে সিভি লেখা: চাকরির বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতার এই যুগে একটি আকর্ষণীয় সিভি (CV) বা জীবনবৃত্তান্তই পারে প্রার্থীকে অন্যদের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে রাখতে। প্রযুক্তি এখন এতটাই সহজলভ্য যে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় ব্যয় না করে নিমিষেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ব্যবহার করে সিভি তৈরি করা যাচ্ছে। বিশেষ করে চ্যাটজিপিটি দিয়ে সিভি লেখা বর্তমান তরুণ প্রজন্মের মধ্যে একটি জনপ্রিয় ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চ্যাটজিপিটি দিয়ে সিভি: নিয়ম ও বিপদগুলো জানেন তো?
তবে মানবসম্পদ বিশেষজ্ঞ এবং প্রযুক্তিবিদরা সতর্ক করছেন, এআই বা চ্যাটজিপিটির ওপর অন্ধ নির্ভরতা হিতে বিপরীত হতে পারে। যন্ত্রের তৈরি সিভিতে মানবিক স্পর্শের অভাব এবং তথ্যের গড়মিল অনেক সময় যোগ্য প্রার্থীর আবেদনও বাতিল হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
সঠিক প্রম্পটেই মিলবে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল
চ্যাটজিপিটি একটি ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল, এটি নিজে থেকে কিছু জানে না। ব্যবহারকারী তাকে যেভাবে নির্দেশনা বা ‘প্রম্পট’ দেবেন, সে ঠিক সেভাবেই আউটপুট দেবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চ্যাটজিপিটি দিয়ে ভালো মানের সিভি পেতে হলে জেনেরিক বা সাধারণ নির্দেশনার বদলে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে হয়।
যেমন—শুধু “আমার জন্য একটি সিভি লিখে দাও”—এমন নির্দেশনায় চ্যাটজিপিটি একটি কাল্পনিক ও সাধারণ মানের সিভি তৈরি করে দেবে। এর পরিবর্তে নিজের কাজের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং যে পদের জন্য আবেদন করা হচ্ছে তার জব ডেসক্রিপশন (Job Description) উল্লেখ করে দিলে এআই অপেক্ষাকৃত ভালো ড্রাফট তৈরি করতে পারে। তবে এটি চূড়ান্ত নয়, কেবল খসড়া হিসেবেই ব্যবহার করা উচিত।
এআই ব্যবহারে বিপদ ও সতর্কতা
প্রযুক্তি সুবিধা দিলেও এর কিছু বড় সীমাবদ্ধতা রয়েছে। চ্যাটজিপিটি দিয়ে সিভি লেখা সহজ হলেও এর ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি।
১. তথ্যের বিভ্রান্তি বা হ্যালুসিনেশন: চ্যাটজিপিটি মাঝে মাঝে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ভুল তথ্য দেয়, যাকে প্রযুক্তির ভাষায় ‘হ্যালুসিনেশন’ বলা হয়। এটি এমন কোনো দক্ষতা বা অভিজ্ঞতার কথা সিভিতে জুড়ে দিতে পারে, যা প্রার্থীর নেই। ইন্টারভিউ বোর্ডে এ নিয়ে প্রশ্ন করলে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হতে পারে।
২. মানবিক স্পর্শের অভাব: এআইয়ের ভাষা অত্যন্ত যান্ত্রিক এবং কাঠখোট্টা। নিয়োগকারীরা সহজেই বুঝতে পারেন কোনটি মানুষের লেখা আর কোনটি রোবটের। সিভিতে প্রার্থীর ব্যক্তিত্ব বা ‘পার্সোনাল টাচ’ না থাকলে তা নিয়োগকারীর নজর কাড়তে ব্যর্থ হয়।
৩. এটিএস (ATS) ফিল্টার: বড় কোম্পানিগুলো এখন অ্যাপ্লিকেন্ট ট্র্যাকিং সিস্টেম (ATS) ব্যবহার করে। কিছু কিছু এটিএস সফটওয়্যার এআই জেনারেটেড কন্টেন্ট শনাক্ত করতে পারে এবং সেগুলোকে স্প্যাম হিসেবে চিহ্নিত করে বাতিল করে দিতে পারে।
(আরও পড়ুন: [ইন্টারভিউ বোর্ডে নার্ভাসনেস কাটানোর ৫টি সাইকোলজিক্যাল হ্যাকস])
নিয়োগকারীরা কী ভাবছেন?
সম্প্রতি বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানির এইচআর বা মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা এআইয়ের ব্যবহারকে নেতিবাচকভাবে দেখেন না, তবে কপি-পেস্ট প্রবণতাকে নিরুৎসাহিত করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি শীর্ষ আইটি প্রতিষ্ঠানের এইচআর প্রধান জানান, “আমরা যখন দেখি দশজন প্রার্থীর সিভির ভাষা ও গঠন হুবহু এক, তখন বোঝা যায় এটি কোনো টুলের কাজ। আমরা চাই প্রার্থী এআই ব্যবহার করে নিজেকে গুছিয়ে নিক, কিন্তু নিজের সৃজনশীলতা ও স্বকীয়তা যেন বজায় থাকে।”
করণীয়: এআই হোক সহায়ক, চালক নয়
প্রযুক্তিবিদদের মতে, চ্যাটজিপিটিকে সিভির মূল লেখক হিসেবে নয়, বরং একজন সহকারী হিসেবে ব্যবহার করা উচিত। চ্যাটজিপিটি দিয়ে সিভি লেখার পর সেটি অবশ্যই নিজে পড়ে দেখা, বানান যাচাই করা এবং নিজের ভাষায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা আবশ্যক। সিভির সামারি বা অবজেক্টিভ অংশটি সম্পূর্ণ নিজের ভাষায় লেখা উচিত, যাতে নিয়োগকারী প্রার্থীর প্রকৃত আগ্রহ ও ব্যক্তিত্ব বুঝতে পারেন।
২০২৬ সালের এই স্মার্ট যুগে প্রযুক্তি ব্যবহার করা দোষের কিছু নয়, তবে প্রযুক্তির ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখাটা জরুরি। একটি নির্ভুল, মানবিক ও স্মার্ট সিভিই পারে কাঙ্ক্ষিত চাকরির দুয়ার খুলে দিতে।
আরও পড়ুন: অনার্স ভর্তি সহায়তা আবেদন ২০২৫: যোগ্যতা, নিয়ম ও অনলাইন ফরম পূরণ—বিস্তারিত গাইড



